ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কবলে চট্রগ্রামের মিরসরাই‘এ বালুবাহী বাল্কহেড ড্রেজার ডুবিতে নিখোঁজ পটুয়াখালীর আট জন শ্রমিকের মধ্যে উদ্ধার হওয়া চার জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় জানাজা নামাজের শেষে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়। ভোরে মরদেহ এলাকায় পৌঁছার পর থেকে সদর উপজেলার জৈনকাঠী ইউনিয়নের চর জৈনকাঠীর কাটাখালী গ্রামের নিহত ৮ জনের বাড়িসহ এলাকায় চলছে শোকের মাতম।
নিহত ৮ জনের মধ্যে ইমাম মোল্লা (৩২), মাহামুদ মোল্লা (৩২), আল-আমীন (২৫), জাহিদ ফকির (২৮) এর জানাজা সম্পন্ন হয়েছে।
এছাড়াও উদ্ধার হওয়ায় শাহিন মোল্লার মরদেহ পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে বলে জানা গেছে।মো. আনিচ মোল্লার ছেলে শাহিন মোল্লা ও ইমাম মোল্লা দু‘সহোদরসহ একই গ্রামের ৮ জনের নিহতের ঘটনায় এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তারা সৈকত-২ নামের বাল্কহেডে শ্রমিকের কাজ করতেন।
জানাজার নামাজে সদর উপেজলা সহকারী কমিশনার ভুমি এ্যসিল্যান্ড মো. আবদুল হাই, জৈনকাঠী ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ মহসীনসহ এলাকার হাজারও মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
জানাজা নামাজে উপস্থিত হয়ে সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি এ্যসিল্যান্ড মো. আবদুল হাই বলেন, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গভীর শোক ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেককে আপাতত দশ হাজার টাকা এবং ড্রেজার মালিকের পক্ষ থেকে প্রত্যেকের জন্য এক লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তা করা হবে।
নিখোঁজদের মধ্যে তারেক মোল্লা (২২), বাশার হাওলাদার (৩৫) ও আলম সরদার (৩২) এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।
সন্তানের মরদেহ একনজর দেখে শাহিন মোল্লা ও ইমাম মোল্লার মা হাসিনা বেগম কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তার সঙ্গে শাহিনের নাবালক তিন সন্তান ও তার গর্ভবতী স্ত্রী খাদিজা বেগমের কান্নায় আকাশ ভারি হয়ে ওঠে। এমন কান্নার রোলে উপস্থিত সকলের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।
দু’সন্তান হারা মা বিলাপ করছেন আর হাসিনা বেগম বলছেন, দু’ভাই দীর্ঘদিন ধরে ওই বাল্ক হেডে কাজ করতেন। কোরবানীর পরে তার বড় সন্তান শাহিন বাড়ি থেকে কাজে যায়। এর একমাস পরে ছোট ছেলেও কাজে যায়। ছোট ছেলে বিবাহ করলেও এখনও বউ উঠিয়ে আনা হয়নি। তিনি তার বাকি সন্তানের মরদেহ এক নজর দেখতে চান। নিহত তারেকের মা সাহিদা বেগমও কাঁদতে কাঁদতে সঙ্গাঁ হারিয়ে ফেলছেন।
মাহমুদের মা মনোয়ারা বেগম আহাজারি করে বলছেন, তার পাঁচ সন্তানের মধ্যে মাহমুদ অবিবাহিত ওই ড্রেজারে কাজ করত। ছেলে হারা বাবা-মা তাদের সন্তানদের মরদেহ বাড়িতে এনে দাফনের দাবি জানান। তাদের আত্মীয়-স্বজনরা ও এলাকার হাজারো মানুষ জানাজায় শরিক হন।
অপরদিকে, আল-আমিন, বাসার হাওলাদার, জাহিদ ফকির ও আলম সরদারদের বাড়িতেও চলছে শোকের মাতম।
দুই সহোদরের বাবা মো. আনিচ মোল্লা বলেন, পিতা বেঁচে থাকতে দু’ই সন্তানের লাশ কোন বাবা এর শোকের ভার সহ্য করতে পারে না। আমার নাতি-নাতিনরা আজ এতিম। আমার বয়স হয়েছে ওদের ভরন পোষনের দায়িত্ব কে নেবে। তিনি বলেন, গত ২৪ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮ টার দিকে শাহিন ও ইমামেরর সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়েছে। ঝড়ের মধ্যে তারা ভালোই ছিল। পরবর্তীতে রাত ৯ টার দিকে ওদের বন্ধু একই এলাকায় অপর বাল্কহেডে কর্মরত জহিরুল নিখোঁজের এ দুঃসংবাদ জানায়। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় মেঝ ছেলে এনায়েত।